আজ মকর।
আমার পুরুলিয়ায় খুব শীত পড়েছে। জলের ওপর ভোরের সেই সরে শীত গুলে এসেছিলাম আমি, আজও হয়তো কেউ হাত দিলে হঠাৎই কেঁপে ওঠে।আমার শহরটা স্নেহের কাঙাল। কেমন সেই হিমনেশায় নেশাগ্রস্ত ভোরগুলোয় লাল টকটকে সূর্যটা আমার নতুন বাড়ির ছাদে উঠে বসে থাকে!
আমার তখন সবে দুকেজি ওজন. ঠাম্মার বাড়ি থেকে নতুন বাড়িতে আসতাম, মুখ থেকে ধোঁয়া বেরোতো। আর আমি ভাবতাম আমিও ড্র্যাগন হয়ে গেছি ওই আঁকার বইটার মতো, বারবার ফুসফুসিয়ে ধোঁয়া ছাড়তাম। একসময় শেষ হয়ে যেত।
কলকাতা,সেই ধোঁয়া কোনোদিন দেখেছো আমার মুখে?
বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে ফটিকদা তখনই ঠংঠং করে বন্ধ শাটারে ধাক্কা দিত একের পর এক আর উপর থেকে দোকানের মালিক লালচাঁদজেঠু চাবি ফেলে দিতো।
তারপর না, লালচাঁদজেঠুর খুব ঠান্ডা লাগতো, লেপের ওমে ফিরে যেত নিশ্চিন্ত শীতে। কিন্তু অদ্ভুত লাগতো আমার, কোনোদিন ফটিকদার কিন্তু ঠান্ডা লাগতে দেখিনি। উনুন রেডি করা,গ্লাস ধোয়া, দোকানের সামনে জল ছিটিয়ে ধুলো বসানো – কত্তো কাজ তখন।
আর আমি, গাঢ় নীল সোয়েটার আর খাকি প্যান্ট পরে ঠান্ডা জানালার রডে নাক চিপে ভাবতাম, নিশ্চয়ই খুব চা খায়, তাই ফটিকদার ঠান্ডা লাগে না।
আমার শহরে হাইরাইজগুলো হাই তোলে না একাবোকা দাঁড়িয়ে, তাই আমাদের ছাদ থেকেই দেখা যেত শহরজুড়ে একরাশ ভালোমানুষি নিয়ে ঘাপটি মেরে কুয়াশা পড়ে আছে, থেকে থেকে চমকে দিচ্ছে সাইকেলচড়া মাফলারদাদুদের। আমার পুরোনো ছোট্টো স্কুলবাড়িটার মাঠে একরাশ ধুলো জমে আছে. মাঝে মাঝে হাওয়ার টানে ছুটে যায়, আবার মায়া মাখা মুখে ফিরে আসে।
আমার পুরুলিয়াতে অনেকটা শীত পড়েছে: সাহেব বাঁধের মাঝের দ্বীপটায় বকগুলোও খুব ওড়াউড়ি ধরেছে. তারাও যে ফিরে যাবে তাদের প্রবাসে। তিনদিন চান না করা অশান্ত ছেলেটার মত একমাথা রুক্ষচুলে দাঁড়িয়ে আমার ছোট্টো শহরটা- চোখভরা তার প্রশ্রয়,আর চোখের কোণে চাপা দেওয়া অভিমান।
পুরুলিয়া একা একাই নীল লাল পতাকা দিয়ে বানানো চৌদোলাতে আদরের টুসুকে ভাসিয়ে আসবে কাঁসাই এর হিমশীতল জলে।
মকর সেলিব্রেশন না, মকর উৎসবও না, আজ আমার সারল্যমাখা শহরটা মকর পরবে মেতে উঠবে।তাতে মিও আমোরের ছাড় থাকবে না, বিগ বাজারেও সেল থাকবে না, থাকবে কেবল খেটে খাওয়া কষ্টের মানুষগুলোর দুঃখ ভুলে থাকার ছল।
চাঁউড়ি-বাঁউড়িতে চালের গুঁড়ো তৈরি,পুর ভরে পিঠে তৈরির নানা উত্তেজনা পেরিয়ে আজ সারা পরিবার যখন একসাথে খেতে বসবে,তখন বাইরে প্রচুর ঠান্ডা থাকবে,কিন্তু ভেতরটা সহজ কথাবার্তার ওমে গরম হয়ে থাকবে।
আর, ধোঁয়াশীতে ভরা কলকাতায় ডোজ-রেসপন্স রিলেশনশিপ আর ড্রাগ পোটেন্সির জালে দমবন্ধ হয়ে আসা একটা ছেলে জানলার দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে গাইবে,
“চল টুসু চল খ্যেলতে যাব / রাণীগঞ্জের বড়তলা/অমনি পথে দ্যাখায় আনব/কুয়াখাদের জল তুলা // আমার টুসু রাগ ক্যরেছে /বরকে দ্যিয়েছেঁ আড়ি/ বাপের ঘরে রইবেক টুসু/ যাব্যেক নাই শ্বশুরবাড়ি. |”
কলকাতা, ‘হ্যাপি’ মকর সংক্রান্তি ভায়া!
addin pore? 😁 but anyways same to you!
arekta kotha, amader forum ache akkhan ei wordpresse, nam ” Thursday Bangla GalpoShalpo”- prottek Thursday ekti kore post dewa jaay. Tomake most welcome on behalf of that forum, ebong sei forum j blog e ache tar link niche dewa roilo:
banglakathaoblog.wordpress.com
LikeLike
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু 🙂
LikeLike
Welcoooo 😉
LikeLike
http://banglakathaoblog.wordpress.com
☺
LikeLike
এটা পড়ে পুরুলিয়া যেতে ইচ্ছে হলো খুব। 🙂
শীতকালে…
LikeLike