ঘাটশিলা

বিভূতিভূষণের বাসস্থান তো দেখে আসা গেল না সময়ের দৌরাত্মিতে, তবে তাঁর ‘ঘর’ দেখে এলাম বইকি! সবুজে লালে মিলেমিশে একাকার ভালোবাসায় কেউ যদি একযুগ মিশে যায়, তবে সে একখানা ‘আরণ্যক’ লিখে ফেলতে পারে অনায়াসে।

ভালো থেকো বুরুডির ভোরঠান্ডা জলের ছোঁয়া।

ভালো থেকো সবুজ পাহাড়ের ছোঁয়ায় সবজে-সাদা জলের দ্বিখন্ডিত সীমারেখা।

ভালো থেকো লালমাটির ছোঁয়ায় লালচে চটি।

ভালো থেকো ২০০১ এর নানা রকমের দোলনাওয়ালা একলা জনশূন্য হলুদ রঙের পর্যটন কেন্দ্র, যার দেওয়ালগুলো লাফিয়ে বেরোনো যায় না।

ভালো থেকো খুঁজে না পাওয়া সেই বুড়়ো কালাকাঁদের দোকান।

ভালো থাকুক সেই বিশাল পাথুরে পাহাড়, যে আমাকে আবার শেখালো, ডেভিডদের লড়তেই হয়। হারিয়ে যাবার, পিছিয়ে পড়বার অলসতা এখানের নিয়মবইতে নেই।

ভালো থাকুক তারা,যারা আমায় উপর থেকে ডেকেছিল,আর আমি শৃঙ্গজয়ের দুঃসাহসিকতায় হাঁচোড়-পাঁচোড় করে ঝরাপাতা আর ছুঁচলো পাথর বেয়ে উপরে উঠেছিলাম।

ভালো থাক সেই লাল হয়ে যাওয়া হাতের তেলো আর আধছেঁড়া জিনসের প্যান্ট।

ভালো থাকুক সেই সরুচুলের ঝর্ণা আর তার বিষঠান্ডা জল, যার খোঁজে তিনটে এককাট্টা লোক মাথায় গামছা বেঁধে এগিয়ে গেছল।

ভালো থেকো সেই সাত কিলোমিটার পাথুরে এবড়োখেবড়ো রাস্তার প্রতিবন্ধকতা।

ভালো থাকবে সেই ছোট্টো গ্রামদুটো, যাদের জল-আচরণে আমাদের চরণগুলো রক্ষা পেয়েছিল।

ভালো থাকুক সেই নিকোনো দাওয়া আর সোলার প্যানেলের উন্নতির মাঝে সেই বুড়িমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ।

ভালো হোক সাদাহাসির সেই ট্র্যাক্টরচালক আর একগাদা দেবের গান গাওয়া ছেলেগুলোর।

ভালো হয়ে উঠুক ঠোক্কর খাওয়া সেই আলনার নার্ভ, যেটা এখনো মাঝে মাঝে কটাং করে উঠছে।

ভালো থাকুক ঠান্ডা স্নান আর বহুদিন পরের সেই সাঁতার।

ভালো থাক পেটপুরে মাংস-ভাতের থালা।

ভালো থাকুক বাস দেখে একদঙ্গল কচির মুখে হাত দিয়ে উল্লাসধ্বনি।

ভালো থেকো পলাশ-মহুল-শিমূলের রঙিন পাগলামি।

ভালো থেকো ঘাটশিলা। খুব ভালো থেকো। পরের দেখায় মিলনের কোলাকুলি হবে তোমার সঙ্গে।

আর হ্যাঁ, উন্নতি করতে যেও না। বলভদ্র সেঙ্গাই গিয়ে উন্নতি করুক। তার আরও মহিষ হোক।
তুমি এমনই থেকো।
ইতি,
সেই ভালোচোখের ছেলেটা