মা দিবস

আজ সবাই মায়ের কথা বলবে। রান্না করে খাওয়ানো মা। টিফিন গুছিয়ে দেওয়া মা। রাত জেগে সেবা করা মা। পড়তে বসানো মা।
আজ সারাদিন মায়ের জয়জয়কার। হাউসওয়াইফ মা। যেসব মায়েরা বাবা অফিস থেকে ফিরলে বাবাকে জল এনে দেয় তড়িঘড়ি। যেসব মায়েরা বাবার ছেড়ে যাওয়া থালায় ভাত খায় রোজ। গৃহবধূ মায়েদের দল।
সিঁদুর, টিপ, ঘোমটা আর আঁচলের আড়ালে এখানে গোটা মানুষটাকে ঢেকে দেওয়া হয়। তার স্পর্শ মানেই স্নেহ, রান্না মানেই ভালোবাসা— এই বাইনারিতে তার পরিবারের প্রতি শ্রমটুকুই ফুটে ওঠে, মানুষটা হারিয়ে যায়। চাপিয়ে দেওয়া মাতৃত্বের তলায়।
এই সমাজ সচেতনভাবেই সেসব মায়েদের কথাই তুলে ধরে। যারা রাঁধেন-বাড়েন, যাঁরা জামার বোতাম সেলাই করে দেন, যাঁরা রাতের বিছানা তৈরি করে দেন। কিন্তু সমাজ সচেতনভাবেই তাদের শ্রমের অংশটুকু চেপে যায়। লুকিয়ে ফেলে ‘শ্রমের মর্যাদা’ দেবার প্রয়োজনবোধকে।

একজন গৃহবধূকে এই পরিবারব্যবস্থা যেভাবে শোষণ করে, তারপরেও এই ‘গৃহশ্রম’কে শুধুমাত্র স্নেহ-মমতা-প্রেমের দোহাই দিয়ে ব্যাখ্যা করা অনুচিত। ‘সংসারের দায়িত্ব’ শব্দবন্ধটুকুর আড়ালে যাঁরা গৃহবধূদের শারীরিক ও মানসিক শ্রমের দিকটিকে চেপে দিতে চাইছেন, তাঁদেরও সচেতন হবার সময় এসেছে।
সমাজের প্রতিটি ‘মা’য়ের কাছ থেকে প্রেমের দোহাই দিয়ে যেভাবে ‘গৃহশ্রম’টুকু নিংড়ে নেওয়া হয় ভোর থেকে রাত পর্যন্ত, তাতে নানাভাবে গৃহবধূ মাদেরকেই প্রশংসার উজ্জ্বল আলোকে দেখাতে চায় সবাই। গৃহবধূর পরিবারপ্রেম, পতিপ্রেম, সন্তানপ্রেমের কথাই বারবার তুলে আনা হবে। ভুলিয়ে দিতে চাইবে তার শ্রমের চরিত্র। ভুলিয়ে দিতে চাইবে তার একান্ত নিজস্ব অধিকারের দাবিগুলো।

পরিবারতন্ত্রের সুখী মুখোশের আড়ালে এসব নিষ্পেষিত শ্রমিকদের কথাও বলা হোক। বলার দরকার আছে।
যাতে, ‘মা কী করে’ প্রশ্নের উত্তরে ভর্তি ক্লাসরুমের সামনে দাঁড়িয়ে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী উত্তর না দেয়— ‘আমার মা কিছু করে না। হাউসওয়াইফ।’

শুভ মা দিবস।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান