ভাষাদিবস

ভাষা দিবস নিয়ে অনেকেই অনেক লেখা লিখে ফেলেছেন। আমারও কিছু কথা নিজেকেই আবার মনে করানো প্রয়োজন ছিল, তাই আমিও সেই পন্থাই অনুসরণ করলাম।

ভাষাদিবসের শপথ:
১. যে ভাষাই বলব বা লিখব, চেষ্টা করব সেটা সঠিকভাবে বলার বা লেখার। ‘mah’ লেখাটা যেমন অসম্মানজনক, একটা ছেলেকে ‘তু ক্যা কর্ রহি হ্যায়’ প্রশ্ন করাও সেরকমই শ্রুতিকটু।
২. কোনোরকম সাহিত্যকেই জনসমক্ষে বিচার করে আমার মতামতের দায় তার ওপর চাপিয়ে দেব না। দুর্জয় দত্ত আমার অপছন্দের লেখক হতেই পারেন, অসম্মানের লেখক যেন না হন কখনোই।
৩. সব রকমের কথ্য ভাষাকে সমানভাবে গ্রহণ করবো। আমার তির্যক হাসি আর বিদ্রূপভরা দৃষ্টির কারণে যেন পুরুলিয়ার গ্রাম থেকে আসা ছেলেটা ‘ক্যানে’ বলতে, বা জলপাইগুড়ি থেকে আসা ছেলেটা ‘যাবা’ বলতে বিব্রতবোধ না করে।
৪. কলকাতার ভাষা মার্জিত হতে পারে, কিন্তু তাকে অযথা সবজায়গায় অনুকরণ করে বন্ধুদের কাছে নিজের মান বাড়াবার চেষ্টা করব না। মফস্বলী উচ্চারণে ‘করছিশ’ বা ‘হওবে’ বলে ট্যাঁশ সাজা যায় না—ট্যাঁশগিরি জন্মসূত্রে লাভ করতে হয়।
৫. বাজারচলতি সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক সাহিত্যকেও সমান গুরুত্ব দেব।
৬. বড় লেখকরাও প্রথমে ছোটো লেখক ছিলেন, একথাটা মাথায় রাখবো। তাই নতুন নামের লেখক দেখলেই এড়িয়ে যাব না, উল্টেপাল্টে দেখব এবং সাধ্যের মধ্যে হলে কিনে ফেলব।
৭. বাংলা ভাষার সঠিক নিয়মকানুন, রীতিনীতিগুলো নিয়ে পড়াশুনো করবো এবং জানবো। তবেই লোকের বানানে খুঁত ধরতে যাবো।
৮. অনেকদিন থেকে ভাবছি স্প্যানিশ শিখবো, সেই ভাবনাকে এবার বাস্তবে রূপান্তরিত করবো। বেশি বয়সে নতুন ভাষা শেখা যায় না, এটা একেবারে ভুয়ো কথা।
৯. অনুবাদ সাহিত্য একটা বিশাল ক্ষেত্র। সেটাকে ব্যবহার করে অন্যান্য ভাষার ভালো লেখকদের চিনবো।
১০. বাংলা প্রেম মানেই ইংরেজি বিদ্বেষ নয়—এটা বোঝার মত বুদ্ধি রাখব। বাংলা বলতে পারি না সেটা যেমন লজ্জার কথা, তেমনি ইংরেজি পড়তে কষ্ট হয়— একথাটাও লজ্জার।
১১. রোজ ব্যবহৃত শব্দগুলো সাহিত্যে ঢুকে পড়লে নাক কোঁচকাবো না। যৌনতা মানেই অশ্লীলতা, এমন ধারণা পোষণ করাটা নিতান্তই ছেলেমানুষি।

সর্বোপরি, বাংলা ভাষার এবং তার চর্চার অবলুপ্তি নিয়ে চিন্তিত মানুষদের জন্য একটাই কথা বলবো, মানুষের ওপর ভরসা রাখুন। জোর করে জ্ঞান দিয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে তর্কের ঝড় বইয়ে কাউকে দিয়ে শিব্রামের বই কেনানো সম্ভব নয়। কেনানো যদিও বা সম্ভব হয়, পড়ানো একেবারেই অসম্ভব। আর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে শিব্রাম পড়ানো মানে তাঁরই অপমান।
তাই ভরসা রাখুন। প্রত্যেক হ্যারি পটারের ক্রেতার জন্য একজন সুকুমার ক্রেতা আছেন। প্রত্যেক দুর্জয় দত্ত ক্রেতার জন্য একজন স্মরণজিৎ ক্রেতা আছেন। প্রত্যেক এডগার অ্যালেন পো ক্রেতার জন্য একজন হেমেন ক্রেতা আছেন। ভরসা থাকুক সেইসব মানুষগুলোর ওপর।
আর ভরসা থাকুক লিটিল ম্যাগাজিনের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষের প্রতি। এঁদের সক্রিয় লড়াই প্রতিমুহূর্তে মনে করিয়ে দেয়, ভাষাযোদ্ধারা এখনও আছেন।

কোনো ভাষা তার প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেললে লড়াইয়ে হেরে যায়। যেমন হেরে গেছিল সংস্কৃত। কিন্তু প্রচণ্ড শক্তিশালী ভাষাগুলো কালজয়ী, তাই তারা আবার ফিরে আসারও ক্ষমতা রাখে। যেমন ফিরে এসেছে সংস্কৃত।
বাংলা ভাষাতে আমার বিশ্বাস রয়েছে। 🙂

বনফুল

— আচ্ছা, বাঙালির সেরা প্রোপোজাল কোন ফুল দিয়ে হবে বলুনতো?
— প্রেম প্রোপোজাল?
— ন্যাহ্! ফুল দিয়ে বিজনেস প্রোপোজাল করবে। বলি মাথায় কি কথাঞ্জলি ভরা আছে?
— উফফ্! সরি সরি। ইয়ে, বেস্ট হচ্ছে গোলাপফুল। আমার মতে অবশ্য।
— আপনার মতটাই জিজ্ঞেস করেছি। দুর্জয় দত্তেরটা করিনি। অকারণে অতো ডিপ্লোম্যাটিক হবেন না তো!
তা, কারণটা শুনি?
— ওই যে, কদিন আগে বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ডেতে রাহুল বলে আমার বন্ধুটা একগাদা গোলাপ নিয়ে অস্মিতাকে প্রোপোজ করলো যে! অসাম দেখতে লাগল!
— আবার বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ডে? ভদ্দরলোকের মতো মুখে কথা বলছি সেটা সহ্য হচ্ছে না, না? ছোটোলোকের মতো ক্যালাবো কি এবার?
— ওই হলো। সরস্বতী পুজো।
— হুমম। কিন্তু উত্তরটা তো হলো না! আবার ট্রাই করুন দিকি।
—ইয়ে, রজনীগন্ধা? বেশ পবিত্র পবিত্র ব্যাপার!
— দুদ্দুর! নেক্সট ট্রাই।
— জুঁই ফুল? স্নিগ্ধতার প্রতীক! আহা!
— হায় ভগবান! এক কাজ করুন, হনলুলু চলে যান। বাংলা আপনার প্রতিভার মর্যাদা দিতে পারছেনা!
— (জিভ টিভ কেটে) আচ্ছা আচ্ছা লাস্ট চান্স দিন একটা। জবা ফুল?
— সেই। জবা ফুল। এক কাজ করুন তো! একটা ধারালো দেখে ছুরি নিয়ে আসুন।
— আবার ছুরি কেন?
— মা কালীর মতো আপনার মুণ্ডু কেটে বাস্কেটবল খেলব! জবা ফুল! জবা ফুল দিয়ে প্রেম?! অ্যাঁ?!
থাক আপনাকে জিজ্ঞেস করাই ভুল হয়েছে।
— বলে দিন না, বলে দিয়ে যান পিলিইজ!

— আরে বাঙালির প্রেমের শ্রেষ্ঠ অস্ত্র হচ্ছে বনফুল!
বনফুল হচ্ছে প্রেম। প্রেম মানেই বনফুল।
প্রোপোজালে টুক করে একখানা অণুগল্প ঢুকিয়ে দেবেন, ব্যাস! অবলা সেই কন্যা আপনার জালে পড়তে বাধ্য।
প্রেমের প্রথম চ্যাপ্টারটাই হচ্ছে গ্রীষ্মের দুপুরে জানালার পাশে বসে একা একা বনফুল পড়া!

আগে নিজেকে ভালোবাসতে শেখো মুরারিলাল! নিজেকে ভালোবাসতে না পারলে অন্য কাউকে ভালোবাসাটা বড্ড চাপ হে!
ভালোবাসো, ভালোবাসো। ভালোবাসা প্র্যাকটিশ করো। (: