—একটা মানুষকে সবথেকে বেশি কী দিতে পারিস?
—রাত আড়াইটের ময়দানের গেট টপকে ঢুকে খুঁজে পাওয়া বিশাল আকাশ আর তার নীচের ঠান্ডা ঘাসের ডগায় নীরবতা, যে আকাশ বুকে নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানো যায়।
— তার সঙ্গে?
— সারাদিন সভ্যতার দাবি মেনে চুপ করে নির্জীব পড়ে থাকা এসপ্ল্যানেড চত্বরের বুক খাঁ-খাঁ করা পাগলামোর হাসি, যা একবার শুনতে পেলে বাকি জীবন বুকের মধ্যে রিনরিন করে।
—এইটুকুই?
—কালো জলে নেড়িকুকুরের চিৎকার গুলে দেওয়া গঙ্গার ঘাটে বসে গাছের পাতার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকা, কখন তার হাসি পায় তার অপেক্ষা।
— শেষ?
— প্রথম রাত, মাঝরাত, শেষরাত এই তিনটে রঙের শেডকে চোখে রেখে মড়ার মত শুয়ে থাকা কোনো এক ঠান্ডা বেদীতে আর খেরোখাতায় রাতের হিসেব।
— সত্যি এসব দিবি?
— নাহ্। নিজে গিয়ে রাতের দালালের কাছে ভাড়া দিয়ে ঢুকিস দেহোপজীবিনী কলকাতার ঘরে। মায়াবিনী বেশ্যাবুড়ির বয়স কমতে শুরু করে রাত বাড়লেই। সারাদিন সে লুকিয়ে থাকে নিজের ঝুপড়িতে, বেরোয় না। তার অসূর্যম্পশ্যা শরীরে দিনের আলো লাগলেই চামড়া আরো কুঁচকে যায়, গাল ঝুলে যায় আর বয়স বাসা বাঁধে। তাই সে লুকিয়ে থাকে দিনমানে। রাত বাড়তে শুরু করলেই তার মায়াজালের কুহকে সময়ের চাকা উল্টোদিকে ঘোরে। গভীর রাতে যখন সে খদ্দেরের মাথা চিবোবার জন্য কালো চিকচিকি শাড়ি পরে দরজার বাইরে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়, আর আঁচলের খুঁট থাকে মুখে, তখন সে লাস্যময়ী যুবতী। কোমর পর্যন্ত কালো চুল, শাড়ির ফাঁকে মসৃণ পেটের আভিজাত্য, ঠোঁটে টকটকে লাল পান আর চোখে সেই মায়া। সবাই সহ্য করতে পারে না। কেউ দূর থেকে দেখেই চিৎকার করে পালাতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়, কেউ সাহস করে সামনে চলে এসে তার হাতের সিগারেটের জ্বলন্ত আগুনে পুড়ে মরে। শহরবুড়িও জানে, তার শরীর নিয়ে যে কেউ খেলা করতে পারে না। আঙুল পুড়ে যায়। তাই সেও সুগভীর নাভি, উন্নত স্তন আর আবেদনে ভরা দৃষ্টি নিয়ে সিঁথিতে সিঁদুর আর হাতে চুড়ি পরে পরস্ত্রীর নিষিদ্ধ কামনা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেই রাতের ভবঘুরের অপেক্ষায়, যে তার নিজের ছন্নছাড়া শরীরের অশান্তিটুকু তাকে দিয়ে শান্ত করবে নিজের শরীরের নিচে।
আর কলকাতার দালালরা সোডিয়াম ভেপার আলোর নীচে ফাঁকা রাস্তার গোপনতায় দাঁড়িয়ে থাকে কমিশনের আশায়।
যাস্ একদিন।