বলেছিলাম

আর বেশি সময় পাবো না। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে প্রচুর সময় নষ্ট করে ফেলেছি। তোমার সাথে। আমার সাথেও। কিন্তু আমাকে তো কথাগুলো বলে যেতে হবে। নইলে তুমি ভাববে অন্য কোনো মানুষের প্রেমে তোমায় একা ফেলে চলে যাচ্ছি। ব্যাপারটা সেটা নয়। সেটা ছিল না কোনোদিনই। আমি বলেছিলাম আমি প্রেমে পড়িনা। আমি বলেছিলাম আমি সম্পর্কে পড়ি না। আমি তোমাকে বলিনি সম্পর্কে পড়লে সবাই ঘুরতে ঘুরতে ভেতরে ঢুকে যায় আর মারা যায়? তুমি হেসেছিলে। আর ঝালমুড়ির লঙ্কা বেছে বেছে ফেলছিলে। শোনোনি কেন? আমি তোমাকে তারাপদর কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম, মানুষের বেশি কাছে এলে আমি গন্ধ পাই। মুখোশের গন্ধ। ভ্যাপসা, বোঁটকা গন্ধ। তোমরা পাবে কী করে? কোনোদিন মানুষের কাছে গিয়ে শুঁকে দেখোনি সে মরে গেছে, না বেঁচে আছে। তাই আমি চলে যাব। আমার পছন্দ হয় না কাছে আসা। তুমি আমার অজান্তেই গায়ে চেপে বসো। চারপাশের মানুষেরা গায়ে চেপে বসে আমার। আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। আমি নিশ্বাস নিতে চাই আর আবার, আবার সেই গন্ধটা নাকে ঢোকে। আমি তোমাকে বোঝাতে বলেছিলাম, কীভাবে একটা মানুষ আরেকটা মানুষের কাছে শান্তি পায়। তুমি পারোনি। পারবেও না। মানুষ ছাড়া বাঁচোনি কোনোদিন। তাই এসব শুনলে তোমার কান্না আসে। কিন্তু আমার জামার হাতা নিজে নিজেই শুকিয়ে যায়, তোমার অপেক্ষা না রেখেই। আমিও একদিন তারাপদর মতই বেরিয়ে পড়ব। কোনো এক বজরায়। কোনো এক গ্রামে। আবার কোনো এক মায়ের আঁচল ফেলে রেখে অন্ধকার রাতে পালাবো। আমি পালাচ্ছি। তুমি মানুষদের নিয়ে ভালো থেকো। আমাকে খুব গালাগাল দিয়ো। পাগল বোলো। তোমার ওয়েভলেংথে বেঁচো। বহুদিন। একঘেয়েভাবে।
আচ্ছা, কোনোদিন কি সত্যিই বোঝোনি? আমার প্রেমের কবিতার নির্লিপ্ততায়? আমার নান্দনিকতার অভাবে? আমার সূক্ষ্মতার অপর্যাপ্ততায়? মনে খটকা লাগেনি? কিন্তু তবু আমি ভালো থাকি। তোমার চেয়ে অনেকটা বেশি। হয়তো ডিলিউশনে থাকি। কিন্তু সেটাও ভালো। তোমার মতো মানুষের ছায়া খুঁজি না। একটা মানুষ কী দিতে পারে? তার বুদ্ধি, মনন, কথা। সবই তো তরঙ্গে ভেসে আসে। আসে না? তবে কাছে গিয়ে তার সাথে লেপটে যেতে চাও কেন? তোমার গায়েও ঘাম, তার গায়েও ঘাম। আর, ঘামে ঘাম মেলাতেই হয় যদি, তবে শরীর মেলাও। তার বেশি কিছু না।

হ্যাঁ, ভালো থেকো।
টিমপ্লেয়ার হও। ম্যাচ খেলো। ঘাম জমুক।
আমি গ্যালারিতে বসি আয়েশ করে। খেলা দেখে আনন্দ পাই।
আর একধাপ করে ওপরদিকে উঠতে থাকি।
আস্তে আস্তে…

তুমি

থরে থরে সাজানো অভিমানের ঠেলা থেকে কয়েকটা বেছে নিয়েছিলে তুমিও। নাওনি বলো? তরতাজা সদ্যজাত অভিমানগুলো থলিতে নির্দ্বিধায় ভরার সময় তাচ্ছিল্যে তার দাম মিটিয়ে আসোনি? ফেরার পথে মুঠো শক্ত করে পেছনে না তাকিয়েই তো বলেছিলে, ‘আমি ঠিক বুঝে নেব।’ ফিরে তাকাওনি। পায়ের শব্দের প্রত্যাশাও করোনি।
ভালো তো। আমি তো পইপই করে বলেছিলাম, নিজের জিনিসের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। অন্যরা নেয় না। নেওয়ার ভান করে মাত্র। তাই, তোমার চলে যাওয়া দেখে ভারী গর্ব হয়েছিল। বুকভরা স্বস্তি নিয়ে আমি দাঁতের পেছনে বলেছিলাম, ‘এ জিতে যাবে। এ বেঁচে যাবে।’
কিন্তু ব্যাগে রেখেছিলে শুধু আবেগ আর অভিমান। আবেগ জিনিসটা, আর যাই হোক, মনের জোরের জন্ম দেয় না। কাঁচের মত জিনিস। কেটে দেয় খুব সহজে, গভীর ক্ষতও সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু ভেঙেও যায় বড় তাড়াতাড়ি। তাও আবেগের জোরে লম্বা রাস্তা বাছার ভুলটা করলে। ব্যাকপ্যাকে জল নেই, শুকনো খাবার নেই, শুধু কিছু শুকনো অভিমান ভরে হাঁটতে শুরু করলে!
মনে পড়েনি যে মাঝরাস্তায় পথের ধারে ব্যাগ খুললে কিছু বাসি অভিমান ছাড়া কিছুই পাবে না। বড়জোর দুচারটে কালো পিঁপড়ে। আবেগটা ব্যাগের চেনের ফাঁক দিয়ে উবে গেছে।

ভয় পেয়োনা ভয় পেয়োনা, তোমায় আমি ফেরাবো না। আমি মানুষ ফেরাই না। পাশে থাকার অস্বস্তির চেয়ে আমার ঢের বেশি পছন্দ রাস্তার শেষে ছোটো হতে থাকা তোমার কালো অবয়বটা।
ব্যাগে এক কৌটো আত্মবিশ্বাস ভরো। এক প্যাকেট একাকীত্ব। ছোটো শিশিটায় একটু স্মৃতি। আর এক বোতল ঘৃণা। বোতলের ছিপিটা আঁটো ভালো করে। পড়ে না যায়। ঠিক হ্যায়?

দুগ্গা দুগ্গা।

১ নম্বর

আর বেশি সময় পাবো না। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে প্রচুর সময় নষ্ট করে ফেলেছি। তোমার সাথে। আমার সাথেও। কিন্তু আমাকে তো কথাগুলো বলে যেতে হবে। নইলে তুমি ভাববে অন্য কোনো মানুষের প্রেমে তোমায় একা ফেলে চলে যাচ্ছি। ব্যাপারটা সেটা নয়। সেটা ছিল না কোনোদিনই। আমি বলেছিলাম আমি প্রেমে পড়িনা। আমি বলেছিলাম আমি সম্পর্কে পড়ি না। আমি তোমাকে বলিনি সম্পর্কে পড়লে সবাই ঘুরতে ঘুরতে ভেতরে ঢুকে যায় আর মারা যায়? তুমি হেসেছিলে। আর ঝালমুড়ির লঙ্কা বেছে বেছে ফেলছিলে। শোনোনি কেন? আমি তোমাকে তারাপদর কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম, মানুষের বেশি কাছে এলে আমি গন্ধ পাই। মুখোশের গন্ধ। ভ্যাপসা, বোঁটকা গন্ধ। তোমরা পাবে কী করে? কোনোদিন মানুষের কাছে গিয়ে শুঁকে দেখোনি সে মরে গেছে, না বেঁচে আছে। তাই আমি চলে যাব। আমার পছন্দ হয় না কাছে আসা। তুমি আমার অজান্তেই গায়ে চেপে বসো। চারপাশের মানুষেরা গায়ে চেপে বসে আমার। আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। আমি নিশ্বাস নিতে চাই আর আবার, আবার সেই গন্ধটা নাকে ঢোকে। আমি তোমাকে বোঝাতে বলেছিলাম, কীভাবে একটা মানুষ আরেকটা মানুষের কাছে শান্তি পায়। তুমি পারোনি। পারবেও না। মানুষ ছাড়া বাঁচোনি কোনোদিন। তাই এসব শুনলে তোমার কান্না আসে। কিন্তু আমার জামার হাতা নিজে নিজেই শুকিয়ে যায়, তোমার অপেক্ষা না রেখেই। আমিও একদিন তারাপদর মতই বেরিয়ে পড়ব। কোনো এক বজরায়। কোনো এক গ্রামে। আবার কোনো এক মায়ের আঁচল ফেলে রেখে অন্ধকার রাতে পালাবো। আমি পালাচ্ছি। তুমি মানুষদের নিয়ে ভালো থেকো। আমাকে খুব গালাগাল দিয়ো। পাগল বোলো। তোমার ওয়েভলেংথে বেঁচো। বহুদিন। একঘেয়েভাবে।
আচ্ছা, কোনোদিন কি সত্যিই বোঝোনি? আমার প্রেমের কবিতার নির্লিপ্ততায়? আমার নান্দনিকতার অভাবে? আমার সূক্ষ্মতার অপর্যাপ্ততায়? মনে খটকা লাগেনি? কিন্তু তবু আমি ভালো থাকি। তোমার চেয়ে অনেকটা বেশি। হয়তো ডিলিউশনে থাকি। কিন্তু সেটাও ভালো। তোমার মতো মানুষের ছায়া খুঁজি না। একটা মানুষ কী দিতে পারে? তার বুদ্ধি, মনন, কথা। সবই তো তরঙ্গে ভেসে আসে। আসে না? তবে কাছে গিয়ে তার সাথে লেপটে যেতে চাও কেন? তোমার গায়েও ঘাম, তার গায়েও ঘাম। আর, ঘামে ঘাম মেলাতেই হয় যদি, তবে শরীর মেলাও। তার বেশি কিছু না।

হ্যাঁ, ভালো থেকো।
টিমপ্লেয়ার হও। ম্যাচ খেলো। ঘাম জমুক।
আমি গ্যালারিতে বসি আয়েশ করে। খেলা দেখে আনন্দ পাই।
আর একধাপ করে ওপরদিকে উঠতে থাকি।
আস্তে আস্তে…