যেমনটা কখনো হয়না

 

ছোটোবেলায় আমাদের একটা স্কুল ছিল। এই স্কুল শব্দটার সাথে ছোটোবেলাটাই মানায় ভালো। যেমন মানিয়ে যেত গরমকালের লম্বা আটঘন্টার দুপুরগুলো। টেনেটুনে এঁটেউঁটে খাপ খেয়ে যেত ঠিকই।
স্কুলটার স্কুল হবার সবরকমই যোগ্যতা ছিল। দুতিনটে মাঠ ছিল। পুরোনো বড় বড় ক্লাসরুম ছিল। চোরকাঁটার জঙ্গল ছিল, যেখানে ফুটবল আনতে গেলেই মোজা আর খাকি প্যান্ট ভর্তি হয়ে যেত চোরকাঁটায়। যেটাকে বলে জুরগুন্ডা। মাঠে প্রচুর ধুলো ছিল। সাইকেল করে বাড়ি ফেরার সময় জুতোয় কিচকিচ করতো। ভাঙা কোণের বাথরুমে ইঁটের লাল টুকরো দিয়ে অনেক কিছু লেখা ছিল। মনিটরদের নাম লেখা ছিল। শিক্ষক দিবসের বিকেলে ভারভারিক্কি স্যারের হাতে বিরাট ওভারবাউন্ডারি ছিল। নিলডাউন ছিল। পরীক্ষায় অঙ্ক ছেড়ে এসে কান্না ছিল। একটা হেডস্যারের অফিস ছিল। হেডমাস্টারকে আড়ালে হেডু বলা ছিল। একটা গোবরে ভর্তি সাইকেল স্ট্যান্ড ছিল; যাতে সাইকেল থাকতো কম, গরু থাকতো বেশি। একটা ক্লাসপালানোর আমতলা ছিল। একটা সাইকেল দিয়ে ঘিরে ক্রিকেট খেলার নিমতলা ছিল। একটা ভূতের গল্পজড়ানো শাল মেহগনির জঙ্গলও ছিল।
আর ছিল নানারকমের বন্ধু। উরেবাব্বা। ছোটোবেলায় যেদিন একসাথে এতোগুলো লোক গিয়ে ক্লাস থ্রির ঘরটায় বসে পড়লাম, সেদিন সবাইকে একইরকম মনে হয়েছিল। সব বেঞ্চে চারজন। আমি শেষ বেঞ্চে। কারণ শেষে এসেছি, দৌড়তে দৌড়তে। রিক্সাকাকু দেরি করে ফেলেছে। তাড়াতাড়িতে ঢুকতে গিয়ে আবার জানালার পাল্লায় ধাক্কা খেয়েছি। প্রথমদিনেই। তাই প্রথমদিনেই সিকিমাথা আলু নিয়ে আমি বসে আছি শেষ বেঞ্চে। ক্লাসে ঢুকে প্রথম চোখ গেলো ব্ল্যাকবোর্ডে। লেখা আছ‌ে, বড়ো বড়ো করে, ‘১০০ থেকে ১ লেখো উল্টোদিকে।’ আমি খাতা পেন বের করে ৭০ পর্যন্ত যেতে না যেতেই দেখলাম, তিননম্বর বেঞ্চ থেকে একটা পাতলা ছেলে উঠে গেল স্যারের কাছে। শুধু আমি না, গোটা ক্লাসই অবাক। স্যারও। পাশ থেকে কে একজন ফিসফিস করে বললো— ‘ঋজু সরকার। ফার্স্ট বয়। অ্যাডমিশন টেস্টে ফার্স্ট হয়েছে।’
প্রথমদিনেই একজন আলাদা হয়ে গেল।
নামতা, বানান, ব্যাকরণের ভিড়েই দিনগুলো কেটে যেত টুকটুক করে। ছোটোবেলা থেকেই ঘর ভালো লাগতো না। তখন ঘর পালিয়ে যাবার একমাত্র রাস্তা ছিল স্কুলবাড়িটা। প্রবল বর্ষাতেও ভিজতে ভিজতে স্কুল, আবার গ্রীষ্মের ছুটির আগে শেষ দিনের ক্রিকেটের জন্যও স্কুল।
ক্লাসমেটরাও আস্তে আস্তে বন্ধু হতে থাকলো। থ্রি থেকে ফোর। ফোর থেকে ফাইভ।
ততদিনে মাঝারি ছেলে হয়ে গেছি। মাঝামাঝি বেঞ্চে বসতাম। হাফিয়ার্লি হোক বা অ্যানুয়ালি, ফার্স্ট-সেকেন্ড-থার্ড কোনোদিনই হতাম না। ভয় ছিল। পাছে স্ট্যান্ড করলে লোকে পরের বারও স্ট্যান্ড করতে বলে। আবার শেষবেঞ্চও তেমন টানতো না। ভয় ছিল। পাছে ফেল করে গেলে লোকে হাসে। তখন থেকেই আদর্শ মধ্যবিত্তের ভয় জাপটে ধরেছিল আষ্টেপৃষ্ঠে। শীতের দুপুরে কিপারের বাঁপাশে দাঁড়াবার সময় বেগুনি মাফলার যেমন প্যাঁচ মেরে কোমরে ঝুলত, সেরকমই সঙ্গী ছিল এই ভয়টা।
ফার্স্টবয় ছিল ঋজু সরকার। সেকেন্ড বয় উন্মেষ নামের একটা ছোট্টোখাট্টো ছেলে। ক্লাসে পড়া ধরতেন স্যার। একটা ড্যাম্প ধরা ক্লাসরুমে। বিকেল হলে একটু একটু অন্ধকার হয়ে আসতো। আর আমরা পা দিয়ে ব্যাগের শেষ চেনে রাখা স্টাম্পার বলটাকে নাড়াতে নাড়াতে ভাবতাম, কখন সিক্সথ্ পিরিয়ডটা শেষ হবে। স্যারের কোশ্চেন জিজ্ঞেস করার বাই চাপলে সাঁৎলে নেমে যেতাম বেঞ্চের তলায়। মাঝে মাঝেই অতিবুদ্ধির জেরে জুটে যেতো কানচাপড় বা মাথায় চাঁটি। সেইসময়েও ঋজু, উন্মেষরা উত্তর দিয়ে যেতো। কতো কতো প্রশ্ন। তার সুন্দর গুছোনো উত্তর।
আর আমরা কাটাকুটি খেলতাম শেষ পাতায়। কেউ ক্রস। কেউ গোল্লা।
পিছনের বেঞ্চেও কতো কতো লোক ছিল। অমিত, বিপ্লব, গৌর। আরো কতো কারা। পিছনের দিকের নাম তো, ভুলে যাওয়া যায় সহজেই। কোনো অজুহাত ছাড়াই। তারা ছিল খারাপ ছেলে। অমিতকে সন্ধ্যের পর নাকি বাইকের পেছনে দেখা যেত। বিপ্লবের হোমওয়ার্কের খাতা স্যার একবার গোটা ক্লাসের সামনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। চ্যালেঞ্জ কোম্পানির সেই জিলজিলে খাতা পড়েছিল ধুলোয় অনেকক্ষণ। সেই থেকে বিপ্লবের নাম হয়ে গেল চ্যালেঞ্জ। ওকে আর কেউ বিপ্লব বলে ডাকতো না।
বিপ্লব যখন স্কুলে ঢুকতো, তখন তার সাইকেলটাকে ঠেলে দিতো মাঠে ঢোকার সময়ই। সাইকেল একা আসত গড়গড়িয়ে গোটা মাঠ। বিপ্লব আসতো পেছনে হেঁটে। একদিনও প্রেয়ার করতো না। অমিত ইউনিট টেস্টে পেত কুড়ির মতো পাঁচ। স্যার বাঁকা হাসি ছাড়া ওর খাতা ফেরত দিতো না। কিন্তু সেই অমিতই লাট্টু খেলায় সবাইকে হারিয়ে দিত। গৌর মাসে তিরিশ দিনের মধ্যে পনেরো দিন ক্লাসে আসতো। ডাইরিতে লম্বা লম্বা লাল দাগ পড়তো। কিন্তু ক্রিকেট টুর্নামেন্টের স্পিন বোলিংয়ে গৌর ছাড়া আর কেউ ছিল না!
ক্লাস বাড়তে লাগলো আমাদের। আমাদের বেঞ্চও মাঝ থেকে সরতে সরতে শেষের দিকে যেতে লাগলো।

এরকমই একটা ছেলে ছিল। পেছনের বেঞ্চে বসতো। মাসে দশদিন আসতো। ডাইরিও আনতো না। স্যার নামপ্রেজেন্টের পর ডাইরি না আনার কারণ জিজ্ঞেস করলেই বলতো, ‘হারায় গেছে সার।’ বলেই চুপচাপ গিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে যেত। স্যার রেগেমেগে বলতেন, ‘বাবাকে বলবি দেখা করতে। কালকেই। হেডমাস্টারের ঘরে।’ রাজশেখর বলতো, ‘আসতে পারবেক নাই সার। বাপ দুধ বেচে। সময় করতে পারবেক নাই দুফুরদিকে।’
হ্যাঁ, ছেলেটার নাম ছিল রাজশেখর। মনে আছে। কোঁকড়ানো চুল। কালো গায়ের রঙ। দাঁতগুলো সাদা। পড়তো বি সেকশনে। বি সেকশনের সাথে আবার আমাদের এ সেকশনের তেল-পিঁয়াজের সম্পর্ক। এমনিতে খুব ভালো ব্যবহার, কিন্তু গরম হলে চিড়বিড় করে ওঠে দুতরফই। বছরে গরম হওয়ার কয়েকটা বাঁধাধরা সময় ছিল। যেমন অ্যানুয়াল পরীক্ষার রেজাল্ট। যেমন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যেমন ফুটবল ম্যাচ।
সেরকমই একটা ক্রিকেট ম্যাচ। ক্লাস সেভেন তখন আমাদের। ডে স্কুল হয়ে গেছে। সাইকেল চেপে স্কুল আসা যাওয়া শুরু হয়েছে। সেইসব সাইকেল ঠেস দিয়ে রেখে আমরা মাঠের ধারে বসে রয়েছি। এ সেকশন ব্যাটিং। বি সেকশন বোলিং। তিন ওভার হয়েছে। তাতেই ৪০ রান উঠে গেছে। অনীশ নামের একটা ছেলে লেগস্পিন করতে এসেছিল। তাকে দুটো ছয় আর একটা চার পাতপেড়ে খাওয়ানো হয়েছে। আমাদের মন খুশি খুশি। আমরা স্কোরিং এর খাতায় তিন নম্বর ওভারের শেষ বলের ছয়টা লিখছি, ওমনি শুনি হইহই শব্দ গোটা মাঠে। দেখলাম ব্যাটিং এন্ডের মহারথী মুখ চেপে পিচে বসে পড়েছেন। শুনলাম নাকি ফোর্থ ওভারের প্রথম বলেই এক পেসার এসে সরাসরি বল ছুঁড়েছে ব্যাটসম্যানের থুতনি লক্ষ্য করে। আমরা তখন এরকম বলকে বলতাম ‘বিমার’। আমার দেখা প্রথম বিমার। সেই ওভারটাতেই তারপর প্রথম হ্যাট্রিক দেখলাম। একটা বোল্ড। উইকেটটা কিপারের পায়ের কাছ পর্যন্ত ছিটকে গেছল। পরের দুটো ক্যাচ। ম্যাচটা জিতে গেছল বি সেকশন। আমরা নক আউট হয়ে গেছলাম।
বি সেকশনের পরের ম্যাচ ছিল সেমিফাইনাল। ম্যাচটা হেরে গেছিল ওরা। হেরে যাবার পর ঘামে ভেজা জার্সি পরেই রাজীব প্রীতমরা অনেক গাল দিয়েছিল রাজশেখরকে। রাজশেখর আসেনি সেদিন। সবাই বার বার বলা সত্ত্বেও। বাপের সাথে দুধ বেচতে গেছল।
সেই প্রথম চিনলাম রাজশেখরকে।
তারপর আস্তে আস্তে ক্লাস পেরিয়ে যেতে থাকলো। আমরা বড় হয়ে যাচ্ছিলাম তাড়াতাড়ি। ছায়া প্রকাশনী, টিউশনি। মাধ্যমিক তখন আর একবছর। সবাই বলতো, ‘জীবনের প্রথম বড়ো পরীক্ষা বাবা। পড় এখন থেকে ভালো করে।’ রাজশেখরকে মাঝে মাঝে দেখতাম একা দুপুরের মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা তখন ম্যাপ পয়েন্টিং করতাম। অন্য কোনো দেশের মাঠে পেন্সিলের দাগ পড়তো।
রাজশেখরকে নিয়ে আবার একটা হইচই হল। ক্লাস নাইনের হাফ ইয়ারলির পরেই। ফোর্থ পিরিয়ড শেষ করে বেরোতেই শুনলাম, রাজশেখরকে নাকি জঙ্গলের ধারে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে। নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। দিন দশ পর আবার যে কে সেই। জিজ্ঞেস করতে বললো নাকি একটা চারা পুঁততে গেছল পুকুরপাড়টায়।
হ্যাঁ, দুমাস আগেই হেডস্যারের নির্দেশে একটা পুকুর খোঁড়া হয়েছিল স্কুলে। শুনতাম নাকি মাছ চাষ হবে। রাজশেখরের মনে হয়েছিল, ‘পুকুরের পাশে গাছ না থাকলে ন্যাড়া লাগবেক নাই পুকুরটা?’

আমাদের মাধ্যমিক চলে এল। টেস্ট শেষ। টেস্টের খাতা দেখতে গেছলাম স্কুল। সাইকেলের তালা খুলবার সময় রাজশেখরের সঙ্গে দেখা। রাজশেখরের তখন টেনেটুনে সবে এইট। অ্যানুয়াল পরীক্ষা ওরও। বলল দেবে না। কারণ জিজ্ঞেস করতে বলল, ‘দিলি নাই। পরে দিব।’
তখন অতো মাথা ঘামাবার সময় কোথায়? টেস্টপেপার, প্র্যাকটিস চলছে। ঋজুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করতে আমিও যাচ্ছি। সবাই কঠিন কঠিন প্রশ্ন খোঁজে টেস্টপেপারে, কোশ্চেন ব্যাঙ্কে। উত্তরও।
মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়ে গেল। সবাই আস্তে আস্তে দুদলে ভাগ হয়ে যেতে শুরু করলো। ইঞ্জিনিয়ারিং নইলে মেডিক্যাল। অঙ্কটা পারতাম না তেমন, তাই আমিও ভিড়ে গেলাম মেডিক্যালের দলে। লোকজন আবার বলতে থাকল, ‘জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা বাবা। সবচেয়ে ক্রুশিয়াল দুটো বছর।’ আবার শুরু হলো ভয় পাওয়া। জয়েন্ট বেসড কোচিং। প্রতিযোগিতা আর রেষারেষি চলতে থাকল সবার মধ্যেই। স্কুল যাওয়া কমিয়ে সবাই ঘরে পড়তে লাগলো বেশি বেশি করে। স্কুলে তেমন পড়া হয় না।
স্কুল গেলেও টিফিনের সময় আর কেউ ব্যাট বার করতো না। এমসিকিউ করতো মোটা বই বের করে। আমরা, মাঝারি বেঞ্চের দল, মাঝে মাঝে খেলতে নামতাম। লোক কম হতো। টিম ছোটো হতো। এরকমই একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখা হল রাজশেখরের সাথে। দুধের ক্যান চাপিয়ে যাচ্ছে বেলগুমা পুলিশ লাইনের দিকে। দেখা হতেই সাইকেল থামিয়ে একগাল হাসি দিল। আমরা ৬-৭ জন একসাথে ফিরছিলাম। সবাই মিলে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন চলছে পড়াশুনো। বলল এবছর মাধ্যমিক। কিন্তু দেবে না। কারণটা বললো ভারি অদ্ভুত হেসে, ‘স্কুলটা ছাড়ি দিতে মন করছে নাই। স্কুলটাই ভালো লাগে।’
আমাদের উচ্চমাধ্যমিক। টেস্টের আগের শেষ দিন ক্লাস। অফিশিয়ালি, স্কুলে আমাদের শেষ দিন। মণীশ একটা ক্যামেরা এনেছে। সবার ছবি তুলে বেড়াচ্ছে ক্লাসজুড়ে।
আমি জানালা দিয়ে আনমনে দেখছিলাম, রাজশেখর কয়েকটা বাচ্চা ছেলের সাথে শর্টপিচ খেলছে। হঠাৎ আউট হয়ে গেল।

স্কুল শেষ হবার পরে সবাই বলে, ফিরে আসবো। কলেজের প্রথম কয়েক বছর ঘর এলে স্কুল যেতামও। সেই সাইকেলটা নিয়েই।
থার্ড ইয়ারে সেরকমই একবার স্কুল গেছলাম। স্যারদের সঙ্গে দেখা করে ফিরছি, দেখলাম মাঠের কোণে একটা নেভিব্লু সোয়েটার পরা ছেলে কার একটা সাইকেলের পাম্প খুলে দিচ্ছে। সামনে যেতেই ছেলেটা একগাল হাসলো। রাজশেখর। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী করছিস রে?’ বললো, ‘ছিলাটা আমার মাকে গাল দিয়েছে সবার সামনে। পাম্পটো খুলে দিচ্ছি।’
আমি বললাম, ‘তোর মা?’
বললো, ‘কবে মইরে গেছে। হায় করেছে।’
রাজশেখর তখনো ইলেভেনে পড়ে। আর্টস নিয়ে। ফেরার আগে বললো, ‘স্কুলটা ছাইড়ে কুথায় যাবো বল? তোরা আসবি, দেখা করবি। আমি ঠিক থেকে যাবো ইখানে।’

আমার বয়স হয়ে গেল ত্রিশ বছর। স্কুল যাইনা বহুদিন। সাইকেলটা পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিল, বাবা কাকে একটা বিক্রি করে দিয়েছে। স্কুলের বন্ধুরা সবাই আছে অবশ্য। ফেসবুকে দেখতে পাই প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করলে। আড্ডা মারাটা আর হয়না। সময়ই ম্যাচ করে না কারোর। কালেভদ্রে ঘর এলেও আর কাউকে ফোন করে ডাকা হয়ে ওঠেনা।
স্কুলটাও পাল্টে গেছে। স্যারেরা প্রায় কেউই আর নেই। সবাই নতুন মুখ। পুরোনো লাল ব্রিটিশ আমলের বিল্ডিংগুলো ভেঙে নতুন বিল্ডিং উঠেছে। স্কুলের দেওয়ালে কাঁটাতার লেগেছে।
হঠাৎ একদিন স্কুলের সামনে দিয়ে বাইক নিয়ে ফিরছি। দেখি একটা চেনা মুখ মেন গেটটা ভেতর থেকে বন্ধ করছে।
রাজশেখর বললো, ‘এখন ঘন্টি বাজাই স্কুলে। আমি ঘন্টি না দিলে স্কুল ছুটি হবেক নাই।’
জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্কুলেই রয়ে গেলি?’
বললো, ‘স্কুলটা ছেড়ে কুথায় যাবো বল? স্কুলটা ছাড়তে মন করে নাই। তোরা সব চলে গেলি, স্কুলটাকে কে দেখবেক বল?’ বলেই হাসলো। একগাল হাসি।

আমি বাইক নিয়ে চলে এলাম।
পেছনদিক থেকে স্কুলের গেটটা বন্ধ হয়ে যাবার আওয়াজ পেলাম।