কমরেড

আচ্ছা, সবাই প্রেম নিয়ে এতো নাচানাচি করে কেন? প্রেম কি মধু সিঙ্গীর গান?

আসলে প্রেম ব্যাপারটা বড়োই একপেশে রে!
সাধারণ মানুষ যে প্রেমটার পেছনে ছোটে, সেটা বড়ই সুপারফিশিয়াল। মানে ওরা ভাবে ওদেরকে ফরেস্ট গাম্পের মত লাগছে, কিন্তু সাইডলাইন থেকে আসলে বাজারের থলি হাতে পাড়ার কিপ্টেকাকু ফটিক ঘোষের মত দেখায়!
সেই ওভাররেটেড প্রেম শুরু হয় নিমেষে, শেষও হয় ক্ষণিকের মধ্যেই! শুরুটা সবাই বুঝতে পারে, সেটা হরমোনজনিত কারণেই হোক বা ফ্রন্টাল কর্টেক্সজনিত কারণে।
কিন্তু সেই প্রেমের শেষটা তাদের চোখে পড়ে না কেন?
কারণ, যদিও সেই প্রেম বিলিতি অফশপের সামনে চাটের দোকানের মতই অ্যাকসেসরি, বা ওষুধের দোকানের সামনে ওজনের যন্ত্রের মতই অ্যাটেনশনখোর; তবু তার মোহে, তার বাহারি চটকে মানুষ চিপকে যায়, চোখদুটো তার গোল্লা গোল্লা হয়ে যায়। ব্যাস, মস্তিষ্ক প্রক্ষালন সমাপ্ত!

আসলে, মানুষ প্রেমিক-প্রেমিকার চিরাচরিত সম্পর্কে যেটুকু প্রেম খুঁজে পায়, সেটুকু শুরুতেই লেগে থাকে।
প্রেম, শুরুতে— ব্যাপারটা গোলমেলে, তাই না?
মানে, যেমন ধরুন, রক্ত পরীক্ষার সময় আঙুল ফোটালে ছুঁচের ডগায় যেমন লেগে থাকে, মাইক্রোবায়োলজির ইনোকুলেশন লুপের ডগায় যেমন ব্যাকটেরিয়ার কলোনি লেগে থাকে, সেরকমই সম্পর্কের শুরুটায় কেবল এক-দু ফোঁটা প্রেম লেগে থাকে। তাও ভেজাল।
কিছুটা হলেও যদি প্রেম থাকে প্রথম আড়চোখে দেখায়, তার ছিঁটেফোঁটাও থাকে না কনফিডেন্ট উড়ন্ত চুমুতে।
কিছুটা হলেও যদি প্রেম থাকে প্রথম কথা বলতে গিয়ে ভয় পেয়ে তোতলানোয়, তার ছিঁটেফোঁটাও পাওয়া যায় না হেসে ফ্লার্ট করায়।
কিছুটা হলেও প্রেম মনে হয় প্রথম পাঠানো ভয়জড়ানো মেসেজকে, তার কণামাত্রও যোগ্য নয় মাঝরাতের দুরন্ত সেক্সটিং।

আসলে, সমাজ বর্ণিত প্রেমের শুরুতেই শুধু মেকি প্রেমের মোড়ক থাকে, বাকিটা শুধুই অভ্যাসের খেলা!

আর, সমাজ যখনই প্রেমের চৌহদ্দি বেঁধে দিতে চায়, তখনই সেটা স্মরণজিৎ এর লেখা রহস্য উপন্যাসের মতো হয়ে যায়। মানে, বড্ডো বেমানান।
হয়না বাপু, হয়না! নলবনে লিপষ্টিক খারাপ করে দেওয়া বা ভিক্টোরিয়ার সবুজ ঘাসে অবাধ্য হাতের বেইমানিকে প্রেম বলতে অস্বস্তি হয় আমার।
আমি প্রেমকে দেখেছি মানুষের গন্ডী ছাড়িয়ে অনেক অনেক বড় হয়ে যেতে। প্রেম দেখেছি হারিয়ে যাওয়াতে, প্রেম দেখেছি মৃত্যুতে। আমি ভালোবাসা দেখেছি পায়ে পা মিলিয়ে দূরে হেঁটে যাওয়ায়।
প্রেমের দৃঢ়তা দেখেছি হাজার মিছিলের হাতগুলো মিলেমিশে যখন ডেভিডের গল্পগুলোই পড়ে আসা বিকেলে সমাজবাদের স্বপ্ন দেখায়। প্রেমের কমনীয়তা দেখেছি কমরেডের চোখে ভেসে থাকা ভরসা আর বিশ্বাসে।

কমরেড, অরিজিৎ সিংয়ের রোম্যান্টিসিজমকে প্রেম বলে ভুল করলে হবে? এখনো অনেক পথ চলা বাকি। চলো,এগিয়ে যাই।

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান